স্বপ্নদোষ কি ও স্বপ্নদোষ থেকে মুক্তির উপায়
মোবাইলের নেট ফ্রী পাবে ক্লিক কর
স্বপ্নদোষ আসলে দোষের নয়।এটি সম্পন্ন একটি প্রাকৃতিক ব্যপার।কিন্ত কখনো কখনো এটি বিরাট দুঃশ্চিন্তার বিষয় হয়ে দাড়ায়।আজ আমরা স্বপ্নদোষ ও স্বপ্নদোষ থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে আলোচনা করব।
স্বপ্নদোষ
কি
স্বপ্নদোষ বা নৈশকালীন নির্গমন হল ঘুমন্ত অবস্থায় অনিচ্ছাকৃতভাবে বীর্যপাত ঘটা। এটি পুরুষদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়, তবে নারীদের ক্ষেত্রেও হতে পারে।
স্বপ্নদোষের কারণগুলি এখনও পুরোপুরি জানা যায়নি। তবে, এর কিছু সম্ভাব্য কারণ হল:
·
হরমোনাল পরিবর্তন: বয়ঃসন্ধিকালে, পুরুষদের মধ্যে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এটি স্বপ্নদোষের ঝুঁকি বাড়ায়।
·
যৌন উত্তেজনা: ঘুমের মধ্যে যৌন উত্তেজনাও স্বপ্নদোষের কারণ হতে পারে।
·
অতিরিক্ত ঘুম: অনেক সময়, অতিরিক্ত ঘুমের কারণেও স্বপ্নদোষ হতে পারে।
স্বপ্নদোষ কতদিন পর পর হয়
স্বপ্নদোষ
কয়দিন পরপর হবে সেটা বলা বা জানা সম্ভব নয় কেননা এটি সম্পন্ন শারীরিক ও মানসিক অবস্থার
উপর নির্ভর করে।তবে বিভিন্ন গবেষনায় নিম্নের তথ্য সমুহ পাওয়া যায়..
স্বপ্নদোষের ফ্রিকোয়েন্সি ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়। সাধারণত, বয়ঃসন্ধিকালে স্বপ্নদোষের ফ্রিকোয়েন্সি বেশি থাকে। এই সময়ে, পুরুষদের মধ্যে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা স্বপ্নদোষের ঝুঁকি বাড়ায়। বয়ঃসন্ধিকালের পর, স্বপ্নদোষের ফ্রিকোয়েন্সি কমে আসে।
প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের মধ্যে, স্বপ্নদোষের ফ্রিকোয়েন্সি প্রতি সপ্তাহে ১ থেকে ৪ বার হতে পারে। তবে, কিছু পুরুষের ক্ষেত্রে স্বপ্নদোষের ফ্রিকোয়েন্সি প্রতি মাসে ১ থেকে ২ বারও হতে পারে।
নারীদের ক্ষেত্রে, স্বপ্নদোষের ফ্রিকোয়েন্সি পুরুষদের তুলনায় কম। তবে, নারীদেরও স্বপ্নদোষ হতে পারে।
নিম্নলিখিত বিষয়গুলি স্বপ্নদোষের ফ্রিকোয়েন্সি বাড়াতে পারে:
·
যৌন উত্তেজনা: যদি আপনি ঘুমের মধ্যে যৌন উত্তেজনা অনুভব করেন, তাহলে তা স্বপ্নদোষের কারণ হতে পারে।
·
অতিরিক্ত ঘুম: অনেক সময়, অতিরিক্ত ঘুমের কারণেও স্বপ্নদোষ হতে পারে।
·
মানসিক চাপ: মানসিক চাপও স্বপ্নদোষের ঝুঁকি বাড়ায়।
·
ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন: ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবনও স্বপ্নদোষের ঝুঁকি বাড়ায়।
নিম্নলিখিত বিষয়গুলি স্বপ্নদোষের ফ্রিকোয়েন্সি কমাতে পারে:
·
স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া
·
পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো
·
মানসিক চাপ কমানো
·
ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন এড়ানো
স্বপ্নদোষের উপকারিতা
স্বপ্নদোষের কোনও নির্দিষ্ট উপকারিতা নেই। তবে, কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে স্বপ্নদোষের কিছু সম্ভাব্য সুবিধা রয়েছে।
·
স্বাস্থ্যকর বীর্য: স্বপ্নদোষের মাধ্যমে শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয় পুরানো শুক্রাণু বেরিয়ে যায়। এতে শরীরে নতুন এবং স্বাস্থ্যকর শুক্রাণুর পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
·
যৌন স্বাস্থ্যের উন্নতি: স্বপ্নদোষের মাধ্যমে যৌন স্বাস্থ্যের উন্নতি হতে পারে। এটি যৌন উত্তেজনা এবং যৌন ইচ্ছা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
·
মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি: স্বপ্নদোষের মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হতে পারে। এটি মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ কমাতে সহায়তা করে।
তবে, এই গবেষণাগুলি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে যাতে স্বপ্নদোষের সম্ভাব্য সুবিধাগুলি আরও নিশ্চিতভাবে বলা যায়।
অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ হলে কি সমস্যা হয়
স্বপ্নদোষের বেশি হওয়ার ফলে সাধারণত কোনও শারীরিক সমস্যা হয় না। তবে, এটি মানসিক সমস্যার কারণ হতে পারে।
অতিরিক্ত স্বপ্নদোষের ফলে যে মানসিক সমস্যাগুলি হতে পারে সেগুলি হল:
·
লজ্জা: অনেক পুরুষ অতিরিক্ত স্বপ্নদোষের কারণে লজ্জায় ভোগেন। তারা মনে করেন যে এটা তাদের যৌন স্বাস্থ্যের সমস্যা।
·
অস্বস্তি: অতিরিক্ত স্বপ্নদোষের ফলে অনেক পুরুষ রাতে ঘুমাতে অসুবিধা হয়। তারা ভয় পান যে তারা স্বপ্নদোষের কারণে বিছানা ভিজিয়ে ফেলবেন।
·
মানসিক চাপ: অতিরিক্ত স্বপ্নদোষের ফলে অনেক পুরুষ মানসিক চাপে ভোগেন। তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন যে তাদের যৌন স্বাস্থ্যের সমস্যা আছে।
·
পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো: পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো স্বপ্নদোষের ঝুঁকি কমায়।
·
মানসিক চাপ কমানো: মানসিক চাপ স্বপ্নদোষের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই মানসিক চাপ কমানো জরুরি।
·
ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন এড়ানো: ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন স্বপ্নদোষের ঝুঁকি বাড়ায়।
স্বপ্নদোষ থেকে মুক্তির কিছু উপায়
স্বপ্নদোষ একটি স্বাভাবিক ঘটনা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, স্বপ্নদোষের জন্য কোনও চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। তবে, যদি স্বপ্নদোষের ফ্রিকোয়েন্সি বা তীব্রতা বেশি হয়, তাহলে স্বপ্নদোষ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
স্বপ্নদোষ থেকে মুক্তির কিছু উপায় হল:
·
স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া: স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার মাধ্যমে শরীরে হরমোনের ভারসাম্য বজায় থাকে। এতে স্বপ্নদোষের ঝুঁকি কমে যায়। স্বাস্থ্যকর খাবারের মধ্যে রয়েছে ফল, শাকসবজি, whole grains, এবং lean protein।
·
পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো: পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো স্বপ্নদোষের ঝুঁকি কমায়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের প্রতি রাতে 7-8 ঘন্টা ঘুমানো উচিত।
·
মানসিক চাপ কমানো: মানসিক চাপ স্বপ্নদোষের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই মানসিক চাপ কমানো জরুরি। মানসিক চাপ কমাতে যোগব্যায়াম, ধ্যান, এবং হাইকিংের মতো কার্যকলাপগুলি করতে পারেন।
·
ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন এড়ানো: ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন স্বপ্নদোষের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন এড়ানো উচিত।
এছাড়াও,
নিম্নলিখিত বিষয়গুলিও স্বপ্নদোষের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করতে পারে:
·
নিয়মিত ব্যায়াম করা: নিয়মিত ব্যায়াম করা শরীরের হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
·
টয়লেটে যাওয়ার আগে প্রস্রাব করা: টয়লেটে যাওয়ার আগে প্রস্রাব করলে মূত্রথলিতে প্রস্রাবের পরিমাণ কম থাকে। এতে স্বপ্নদোষের ঝুঁকি কমে যায়।
·
ঘুমের সময় আন্ডারওয়্যার পরানো এড়ানো: ঘুমের সময় আন্ডারওয়্যার পরানো এড়ানো উচিত। এতে লিঙ্গের উপর চাপ কম থাকে।
স্বপ্নদোষ থেকে মুক্তির কিছু ইসলামিক উপায়
ইসলামে স্বপ্নদোষকে একটি স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইসলামী শরিয়তে স্বপ্নদোষের জন্য কোনও নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে, কিছু ইসলামী পরামর্শ রয়েছে যা স্বপ্নদোষের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
স্বপ্নদোষ থেকে মুক্তির কিছু ইসলামিক উপায় হল:
·
নিয়মিত নামাজ পড়া: নিয়মিত নামাজ পড়া শরীর ও মনকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে। এতে স্বপ্নদোষের ঝুঁকি কমে যায়।
·
রোজা রাখা: রোজা রাখা শরীরের হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এতে স্বপ্নদোষের ঝুঁকি কমে যায়।
·
যেসব জিনিস স্বপ্নদোষের কারণ হতে পারে সেগুলো এড়ানো: যেমন, অতিরিক্ত ঘুম, মানসিক চাপ, ধূমপান, এবং অ্যালকোহল সেবন।
·
নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত করা: কুরআন তিলাওয়াত করলে শরীর ও মন শান্ত হয়। এতে স্বপ্নদোষের ঝুঁকি কমে যায়।
এছাড়াও,
নিম্নলিখিত দোয়াটি পড়া যেতে পারে:
بِسْمِ
اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
اللَّهُمَّ
إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ، وَالْجُنُونِ، وَالْجُذَامِ، وَمِنْ سَيِّئِ
الْأَسْقَامِ
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল বারাসি,
ওয়াল জুনুনি,
ওয়াল জুদামি,
ওয়া মিন সাইয়িয়িল আসকাম
অর্থ:
হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে পাগলামী, কুষ্ঠ, এবং কুষ্ঠরোগ থেকে আশ্রয় চাই। এবং সব ধরনের অসুখ থেকে।
এই দোয়াটি প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে তিনবার পড়া যেতে পারে।
স্বপ্নদোষের জন্য এলোপ্যাথিক ঔষধ
স্বপ্নদোষের জন্য কোন নির্দিষ্ট এলোপ্যাথিক ঔষধ নেই। তবে, কিছু ক্ষেত্রে, ডাক্তাররা হরমোন থেরাপি বা মানসিক চিকিৎসার পরামর্শ দিতে পারেন।
হরমোন থেরাপি:
যদি স্বপ্নদোষের কারণ হরমোনের ভারসাম্যহীনতা হয়, তাহলে ডাক্তাররা হরমোন থেরাপির পরামর্শ দিতে পারেন। হরমোন থেরাপির মাধ্যমে শরীরের হরমোনের ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করা হয়।
মানসিক চিকিৎসা:
যদি স্বপ্নদোষের কারণ মানসিক চাপ বা উদ্বেগ হয়, তাহলে ডাক্তাররা মানসিক চিকিৎসার পরামর্শ দিতে পারেন। মানসিক চিকিৎসার মাধ্যমে মানসিক চাপ বা উদ্বেগ কমানো হয়।
হরমোন থেরাপির জন্য ব্যবহৃত কিছু ওষুধ হল:
·
টেস্টোস্টেরন: টেস্টোস্টেরন হল পুরুষদের প্রধান যৌন হরমোন। টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কম থাকলে স্বপ্নদোষের ঝুঁকি বাড়ে।
·
প্রোজেস্টেরন: প্রোজেস্টেরন হল মহিলাদের একটি যৌন হরমোন। প্রোজেস্টেরনের মাত্রা কম থাকলে স্বপ্নদোষের ঝুঁকি বাড়ে।
স্বপ্নদোষের জন্য এলোপ্যাথিক ঔষধ গ্রহণের আগে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।